স্বদেশ ডেস্ক:
টানা তিন সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর আজ বৃহস্পতিবার রাস্তায় নামছে বাস। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আজ ভোর থেকে শুধু জেলার সীমানার ভেতর চলবে বাস। তবে আন্তঃজেলা চলাচল এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধই থাকবে। বন্ধ থাকছে ট্রেন-লঞ্চও। ফলে দূর-দূরান্তে যেতে আকাশপথের ওপর নির্ভর করছেন অনেকে। এ সুযোগে উড়োজাহাজে ভাড়া বেড়েছে অনেক। কিছু গন্তব্যের টিকিট নেই। আকাশযানে ভাড়া সরকারিভাবে নির্ধারণের সুযোগ নেই। বিমান চলে আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের বিধানমতে।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আন্তঃজেলা গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। তবে ৫ মের পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসাপেক্ষে জেলার ভেতর গণপরিবহন চলাচল করতে পারবে। ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে।
অনেকে ঢাকার বাইরের সাতটি গন্তব্যে যেতে সড়ক, রেল ও নৌপথের বিকল্প হিসেবে বিমানে যাতায়াত করেন। এবার ঈদের আগেও যেহেতু আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন, লঞ্চ বন্ধ থাকছে, তাই আকাশপথে যেতে ইচ্ছুকদের সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি।
এ কারণে দেশের বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ রুটের টিকিটের চাহিদা বেড়ে গেছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকার টিকিট ৯ হাজার টাকাতেও মিলছে না। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ইউএস-বাংলাসহ সব সংস্থারই একই হাল- টিকিট সংকট।
করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে গত ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন মাত্রার বিধিনিষেধ জারি করছে সরকার। তখন থেকেই গণপরিবহন বন্ধ। তৃতীয় দফায় ৫ মে পর্যন্ত ‘লকডাউন’ বাড়ানোর পর গণপরিবহন চালুর দাবি তোলেন পরিবহন শ্রমিকরা।
আজ থেকে গণপরিবহন চালাতে পরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছে সড়ক পরিবহন সমিতি। এগুলো হচ্ছে মাস্ক ছাড়া যাত্রী ওঠানো যাবে না। পরিবহনের শ্রমিকদের মাস্ক সরবরাহ করবে এটির মালিক। অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে অর্থাৎ দুই আসনের সারিতে একজন করে বসবেন। দাঁড়িয়ে কোনো যাত্রী নেওয়া যাবে না। পরিবহন সমিতি বা কোম্পানির নামে কোনো জিপি (গেটপাস) আদায় করা যাবে না।
সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সূত্রগুলো বলছে, জেলার ভেতর যানবাহন সীমাবদ্ধ রাখা কঠিন। যেমন ঢাকায় যেসব বাস চলাচল করে, এর একটা বড় অংশেরই যাত্রার স্থান বা শেষ গন্তব্য ঢাকার বাইরে। যেমন গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এসব জেলা থেকে প্রতিদিন শত শত বাস ঢাকায় ঢোকে ও বের হয়। একজন পরিবহন মালিক বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী জেলার ভেতর বাস চলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই, আশুলিয়া ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত। ফলে এসব এলাকার বাস অন্য জেলায় যাবে না, এটা নিশ্চিত করাও কঠিন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা দরকার। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, কিছু নির্দেশনা অনুসরণ করে গাড়ি চালানোর জন্য ঢাকা মহানগরে চলাচলকারী সব রুট মালিক সমিতি বা পরিবহন কোম্পানি-সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে নৌযান চালানোর দাবিতে গতকাল বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন নৌযান শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের ব্যানারে মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএর সামনে এ বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী এবং নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
সমাবেশে ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম ভূঁইয়া প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, যদি নৌযান চলাচলের অনুমতি না দেন, তা হলে ঈদের আগে ১০ মের মধ্যে প্রত্যেক নৌশ্রমিকের বকেয়া বেতন ও বোনাস প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। সমাবেশে নৌযান শ্রমিক নেতারা বলেন, নৌশ্রমিকদের সরকার বা মালিকদের পক্ষ থেকে কোনো সহযোগিতা করা হয়নি। অনেক শ্রমিক মার্চের বেতনও পাননি। পবিত্র রমজান মাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।